প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অ্যাপল বাজারে আনলো ‘নতুন আইপ্যাড।’ সবাই আইপ্যাড ৩ আশা করলেও অ্যাপল নতুন কোনো ‘যুগান্তকারী ফিচার’ না এনে বরং আগের ফিচারগুলেরই যথেষ্ট উন্নত সংস্করণের আইপ্যাড বাজারে আনার ঘোষণা দিলো। আর এর ফলে প্রযুক্তি বিশ্বে শুরু হয়েছে নতুন এক বিতর্ক। নতুন আইপ্যাড কেনা ঠিক হবে কি-না।
যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে নতুন আইপ্যাডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেসব বৈশিষ্ট্য এখনই নতুন একটি আইপ্যাড কেনার জন্য যথেষ্ট কি না এ নিয়েই মূলত শুরু হয়েছে এই বিতর্ক।
নতুন আইপ্যাডের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে এর রেটিনা ডিসপ্লে যার রেজুলিউশন ২০৪৮ বাই ১৫৩৬ পিক্সেল, এ৫এক্স প্রসেসর, কোয়াড কোর গ্রাফিক্স সিস্টেম, ৫ মেগাপিক্সেল আইসাইট ক্যামেরা এবং ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা। কিন্তু এতোকিছুর পরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন আইপ্যাড কেনার আগে কিছু বিষয় যাচাই করে নেয়া উচিত। এমবি ডটকম অবলম্বনে সেসব বিবেচ্য বিষয়গুলোই নিচে তুলে ধরা হলো।
যে কারণে নতুন আইপ্যাড কিনতে পারেনঃ
১. আপনি যদি মুভি বা সিনেমার ভক্ত হন এবং প্রচুর মুভি দেখে থাকেন, তাহলে আইপ্যাডের ৯.৭ ইঞ্চি আকারের রেটিনা ডিসপ্লে এইচডি মুভি দেখার জন্য অতুলনীয় হতে পারে। এইচডি সিনেমা দেখার জন্য এবং অন্য হাই রেজুলিউশনের গ্রাফিক্স প্রয়োজন এমন কাজের জন্য চলতি পথে নতুন আইপ্যাড হতে পারে আদর্শ। এর গ্রাফিক্স প্রসেসর আগের মডেলের তুলনায় চারগুন ক্ষমতাসম্পন্ন।
২. আপনি যদি ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার করে ছবি তুলতে পছন্দ করেন এবং তা কম্পিউটারে না পাঠিয়েই ছোটখাটো এডিটিং বা সম্পাদনার কাজ করতে চান, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার জন্য আদর্শ সঙ্গী হিসেবে কাজে আসবে। এর নতুন শক্তিশালী প্রসেসরের সাহায্যে অনেক কাজ একসঙ্গে খুব সহজেই করা যায়। শখের ফটোগ্রাফাররা খেয়াল রাখুন, নতুন আইপ্যাডে আপনি পাবেন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সুবিধা। এর ফলে ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময় হাত কেঁপে গেলেও আপনার তোলা ছবিতে বা ভিডিওতে সেই ঝাঁকুনি টের পাওয়া যাবে না।
৩. আপনি যদি অনেক ভ্রমণ করে থাকেন এবং ৪জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে চান, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার কাজে আসবে। আজ যদি আপনি নতুন আইপ্যাড কেনেন, তবে বাংলাদেশে যখন ফোর জি নেটওয়ার্ক চালু হবে, তখন আপনাকে আর ডেটা স্পিড নিয়ে ভাবতে হবে না। তবে ফোর জি নেটওয়ার্ক না পেলে এটি সহজেই থ্রিজি সংযোগে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। অন্য ট্যাবলেটগুলো যেখানে সর্ব্বোচ্চ ৭.৩ মেগাবিট পার সেকেন্ড ডাউনলোড করতে পারে, সেখানে নতুন আইপ্যাড-এর ডাউনলোড ক্ষমতা ৭৩ মেগাবিট/সেকেন্ড।
৪. আপনি যদি ‘লেটেস্ট ডিভাইস’-এর মালিক হতে পছন্দ করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড কিনতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন আইপ্যাড কেনার মতো সামর্থ্য থাকলে এবং বন্ধুমহলে তা দেখানোর ইচ্ছে থাকলে নতুন আইপ্যাড কেনা যেতে পারে। কেননা, অনেকেই আরো অনেক কিছু প্রত্যাশা করলেও একেবারেই খারাপ নয় অ্যাপলের নতুন আইপ্যাড।
যেসব কারণে আইপ্যাড কিনবেন নাঃ
১. আপনি যদি ইতোমধ্যেই কোনো ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার না করে থাকেন এবং যদি মনে হয় যে, ট্যাবলেটের চেয়ে নোটবুক কম্পিউটারেই আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার জন্য নয়। ট্যাবলেট ডিভাইসে যদি আপনি সহজে কাজ করতে না পারেন, তাহলে নতুন আইপ্যাডও কোনো চমক নয়। কেননা, এতে অন্যান্য ডিভাইস থেকে বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলেও কাজ করে বাজারের প্রায় অন্যান্য সব ট্যাবলেট ডিভাইসের মতোই।
২. আপনি যদি অনেক মিডিয়া ফাইল ব্যবহার না করেন, অর্থাৎ খুব একটা মুভি না দেখেন, ছবি না দেখেন, ভিডিও, ক্যাটালগ এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন না পড়েন, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে। অধিকাংশ মানুষই আইপ্যাডে সাধারণ ব্রাউজিং-এর পাশাপাশি মিডিয়া ফাইল এবং ই-বুক বা ম্যাগাজিন পড়ে থাকেন। বলা যায়, এটি হতে পারে আইপ্যাড কেনার অন্যতম কারণ।
৩. আপনি যদি আগেই কোনো ট্যাবলেটের মালিক হয়ে থাকেন এবং এর ক্যামেরা যদি আপনি খুব একটা ব্যবহার না করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড এখনই কিনলেও খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে। কেননা, নতুন আইপ্যাডের অল্প কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে পেছনের ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যা সাপোর্ট করে অ্যাপলের আইসাইট।
৪. আপনার যদি ইতোমধ্যেই আইপ্যাড ২ থাকে এবং নতুন আইপ্যাড কেনার মতো টাকা না থাকে, তাহলে এখনই এটি বিক্রি করে নতুন আইপ্যাড কেনার চেষ্টা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কেননা, আইপ্যাডের অন্যতম সুবিধা এর ৪জি ইন্টারনেট ক্যাপাবিলিটি থাকলেও ৩জি ইন্টারনেটই কাজ করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই, এখনই নতুন আইপ্যাডের জন্য চেষ্টা না করে অপেক্ষা করতে পারেন পরবর্তী আইপ্যাডের জন্য।
অ্যাপলের নতুন আইপ্যাডের সঙ্গে আরো কিছু ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। তারা জানিয়েছে, অ্যাপলের আইফটোতে মাল্টি-টাচের মাধ্যমে ছবি সম্পাদনার কাজ করা যাবে। পাশাপাশি আপডেট করা হয়েছে আইওয়ার্ক এবং আইলাইফ।
সবশেষে যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে নতুন আইপ্যাড কিনবেনই, তাহলে মাত্র ৪৯৯ ডলারে কেবল ওয়াই-ফাই সুবিধা সম্বলিত ১৬ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার ‘নতুন’ আইপ্যাড এখনই প্রিঅর্ডার করতে পারেন। পাশাপাশি একই ধারণক্ষমতার ৪জি সুবিধা সম্বলিত আইপ্যাড কিনতে পারেন ৬২৯ ডলারে।
সূত্রঃ বিডি নিউজ ২৪
http://banglamdfarid-com.webs.com/