09/04/2012

সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫৭ মক্কার বাইরে ইসলামের আলো (৩)

সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫৭ মক্কার বাইরে ইসলামের আলো (৩):
সিরিজের আগের পর্ব  সীরাতুন্নবী (সাঃ) ৫৬ মক্কার বাইরে ইসলামের আলো (২)
আগের পর্বের কিছু অংশ
এই ঘোষনার পর কোরাইশরা পরস্পর বলাবলি শুরু কললো যে, উঠো, তোমরা এ বেদ্বীনের খবর নাও। এরপর তারা আমাকে এমনভাবে প্রহার করলো যে, ভেবেছিলাম মরেই যাবো। এ অবস্থায় হযরত আব্বাস (রা) এসে আমাকে বাঁচালেন। তিনি একটুখানি ঝুকে আমাকে দেখলেন, এরপর কোরাইশদের বললেন, এ লোক গেফার গোত্রের। তোমরা ও গোত্রের এলাকার উপর দিয়েই ব্যবসা করতে যাও। এ কথা শুনে পৌত্তলিক কোরাইশরা আমাকে ছেড়ে দিলো। পরদিনও আমি সেখানে গেলাম এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এবারও হযরত আব্বাস (রাঃ) এসে আমাকে উদ্ধার করলেন
(৪) তোফায়েল ইবনে আমর দাওসি, এই লোক ছিলেন কবি, বুদ্ধি বিবেচনায় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং তার গোত্রের সর্দার। এই গোত্র ইয়েমেনের কিছু অংশের শাসন ক্ষমতার অধিকারী ছিল। নবুয়তের একাদশ বর্ষে তিনি মক্কায় গেলে মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে অর্ভ্যথনা জানায় এবং তার কাছে রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে নালিশ করে। তারা বলে যে, এই লোক  আমাদের জটিল অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমাদের ঐখ্যে ফাটল ধরিয়েছে, তাঁর কথায় রয়েছে যাদুর মত প্রভাব। এতে ভাই ভাইয়ের মধ্যে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে, পিতা পুত্রের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশংখা করছি যে বিপদের মধ্যে আমরা পড়েছি, আপনিও সেই বিপদে পড়েন কিনা। কাজেই আপনার কাছে আবেদন এ লোকের সাথে কোন কথাই বলবেন না।
হযরত তোফায়েল (রাঃ) বলেন, কোরাইশ পৌত্তলিকরা আমাকে নানাভাবে বোঝালো, এক সময় আমি সিদ্ধান্তই নিয়ে ছিলাম যে, আল্লাহর রসুলের সাথে কথাও বলবো না তাঁর কোন কথা শুনবোও না। সকালে মসজিদে হারামে যাওয়ার পর কানে তুলো গুঁজে দিয়েছিলাম যাতে রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন কথা আমার কানে না যায়। কিন্ত আল্লাহ তাআলা রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু কথা আমাকে শোনানোর ইচ্ছে করেছিলেন। এরপর আমি কিছু ভালো কথা শুনলাম। মনে মনে বললাম, আমিতো বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ। খ্যাতনামা কবি। ভাল-মন্দ কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকতে পারেনা। কেন আমি ভাল কথা শুনবোনা ? যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে গ্রহণ করব। মন্দ হলে গ্রহণ করবো না। এ কথা ভেবে চুপজাপ থাকলাম। আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে ফিরতে শুরু করলে তাঁর পিছু নিলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন, আমিও ঘরে প্রবেশ করলাম। এরপর লোকেরা আমাকের তাঁর ব্যাপারে যে সতর্ক করেছিলো এবং সর্তকতা হিসেবে কানে তুলো গুঁজে দিয়েছিলাম সে সব কথা তাঁকে শোনালাম। এরপর বললাম, আপনি সবাইকে যে কথা বলে থাকেন, আমাকেও বলুন। আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং কোরআন পাঠ করে শোনালেন। আমি সাথে সাথেই ইসলাম গ্রহণ করলাম। আল্লাহর শপথ, আমি এর চেয়ে ভালো কথা আগে কখনো শুনিনি। আমি সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করে সত্যের স্বাক্ষী দিলাম। এরপর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, আমার কওমের কাছে আমার কথা গ্রহণযোগ্য, তারা আমাকে যথেষ্ঠ মান্য করে। আমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবো। আপনি আল্লাহর কাছে দোআ করুন, তিনি যেন আমাকে কোন নির্দশন দেখান। রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  দোআ করলেন।
হযরত তোফায়েল (রাঃ) কে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো, সেটা এই যে, তিনি তাঁর কওমের কাছাকাছি পৌছার পর তাঁর চেহারা চেরাগের আলোর মত উজ্জল হয়ে গিয়েছিলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ, অন্য কোথাও এ আলো স্থানান্তর করে দিন, অন্যথায় চেহারা বিকৃতি হওয়ার অপবাদ দিয়ে ওরা আমার সমালোচনা করবে। এরপর সেই আলো আমার হাতের লা্ঠির মধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। হযরত তোফায়েল (রাঃ) তাঁর পিতা ও স্ত্রীর কাছে ইসলামের দাওয়াত দেন, এতে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করে। তবে তাঁর কওমের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে দেরী করে। কিন্ত হযরত তোফায়েল (রাঃ) ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যান। খন্দকের যুদ্ধের পর তিনি যখন হিজরত করেন সে সময় তাঁর কওমের সত্তর বা আশি পরিবার তাঁর সঙ্গে ছিলো। হযরত তোফায়েল (রাঃ) ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
{চলবে}
প্রথম প্রকাশ

http://banglamdfarid-com.webs.com/

Popular Posts

Followers